নেটওয়ার্ক বুস্টার বলতে মূলত সে ডিভাইসকেই বুঝায়, যেটি মোবাইল এর নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধান করে থাকে। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বৃদ্ধিতে সাহায্যকারী ডিভাইস হলো জিএসএম। আমাদের মোবাইল অতি উচ্চমানের হওয়ার পর ও নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে আমরা বিরক্ত হয়ে পড়ি এটি ব্যবহারের সময়ে। সঠিকভাবে কাজ করতে পারিনা, কাজে বাধা প্রাপ্ত হই।
তাছাড়াও ব্যবসাসহ সকল প্রকার গুরুত্বপূর্ণ কাজে যখন মোবাইলের সঠিক ব্যবহার করা যায়না তখন অবশ্যই রাগ লাগার কথা। সে সকল সমস্যার সমাধানকারী হিসেবেই নেটওয়ার্ক বুস্টারের আগমন।
মোবাইল নেটওয়ার্ক বুস্টার কি?
মোবাইল নেটওয়ার্ক বুস্টার বলতে আমরা তাই বুঝি যা মোবাইল নেটওয়ার্ক এর সিগনালকে বুস্ট করে কলিং কোয়ালিটি এবং ইন্টারনেট এর স্পিড বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
অ্যামপ্লিফায়ার বা সেলুলার রিপিটার নামে পরিচিত মোবাইল নেটওয়ার্ক বুস্টার হলো একধরণের দ্বি-নির্দেশক, যেটি মোবাইলের নেটওয়ার্ক উন্নত করতে ব্যবহার হয়ে থাকে। মোবাইল ফোনের সিগনালকে স্ট্রং করার ক্ষেত্রে এটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।
এটির একটি দাতা অ্যান্টেনা থাকে যা নিকটতম টাওয়ার, তার, সংকেত পরিবর্ধক অথবা কোন অ্যান্টেনা থেকে সংকেত গ্রহণ ও প্রেরণ করে থাকে। আর এগুলোর মাধ্যমেই শক্তিশালী কমিউনিকেশন সম্ভবপর এবং সব কিছুর শেষে আপনার মোবাইলফোন নেটওয়ার্ক সমস্যা অথবা কম ইন্টারনেট স্পিড থেকে মুক্তি পাবে।
মোবাইল নেটওয়ার্ক বুস্টার যেভাবে কাজ করে
মোবাইল নেটওয়ার্ক বুস্টার কিভাবে কাজ করে সেটা জানতে হলে, অবশ্যই এটা জানতে হবে নেটওয়ার্ক বুস্টারের কাজ কি? সহজ ভাষায় নেটওয়ার্ক বুস্টার এর কাজ হলো মোবাইলের নেটওয়ার্কের সমস্যা দূর করা।
অর্থাৎ, যেসকল এরিয়া বা অঞ্চলের নেটওয়ার্ক দূর্বল সে সব এরিয়ার নেটওয়ার্ক সিগনালকে শক্তিশালী করা। আর তারপর আসে নেটওয়ার্ক বুস্টার যেভাবে কাজ করে। গুরুত্বপূর্ণ বা মজার ব্যাপার হলো এটা জানা। দ্বি-নির্দেশক সিগনাল বুস্টারের সংমিশ্রণের মাধ্যমে ডেটা ও কল উভয়ের নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট স্পিডের ক্ষমতা বাড়ানো যায়।
বুস্টারের কাজ বুঝার জন্য যা জানতে হবে তাহলো- ইনডোর অ্যান্টেনা এবং দাতা অ্যান্টেনা। প্রথমটির কাজ হলো সিগনাল রিসিভ করা। দূর্বল সিগনাল রিসিভ করে সেটিকে বুস্টারে পাঠিয়ে সবল তথা শক্তিশালী করে মোবাইল ফোন অথবা অন্যান্য ডিভাইসে ব্যবহারের যোগ্য করে সেসকল ডিভাইসে প্রেরণ করা।
মোবাইল নেটওয়ার্ক এর পূর্ণ বা সকল সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় উপায়টি হলো- শক্তিশালী সংকেত টাওয়ারে প্রেরণ করা। মোবাইল ফোনের ট্রান্সমিশন সীমিত আকারের হওয়ার কারণে দ্বিমুখী সিগনালের ব্যবহারে সংকেতগুলোকে বহুদূরের টাওয়ার পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব।
মোবাইল নেটওয়ার্ক বুস্টার ব্যবহার করলে কি কি সুবিধা পাওয়া যায়?
আনাড়িদের প্রশ্ন হতে পারে এমন যে, মোবাইল নেটওয়ার্ক বুস্টার ব্যবহার করলে কি কি সুবিধা পাওয়া যায়? তাই সেজন্য প্রথমে বুস্টারের সবটা জানা জরুরি। যেহেতু বুস্টার দূর্বল নেটওয়ার্ক কে সবল তথা শক্তিশালী করে মোবাইলের কল এবং ইন্টারনেট স্পিড বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। সেহেতু বুস্টার ব্যবহারের অনেকগুলো সুবিধা রয়েছে।
যানবাহনে অবস্থানকালেও এটি মোবাইল ফোন ইউজারকে যথেষ্ট সাহায্য করে থাকে। হোম সিগনাল বুস্টার গুলো মূলত অনেক ইউজার একসাথে ইউজ করে থাকে আর অনেক ধরণের নেটওয়ার্ক পরিচালনা করতে পারে।
গাড়িতে ব্যবহারের বুস্টারগুলো গাড়িতে ব্যবহারের জন্য অথবা সংকেতগুলো উন্নত এবং শক্তিশালী করে ব্যবহার করতে ব্যবহার হয়। এটির সংস্করণগুলোর মধ্যে বিশেষ করে সেমি ট্রাক এবং যানবাহনের জন্য তৈরি সংস্করণ রয়েছে। আপলিংকের কানেকশন মজবুত হয়ে থাকলে আপনার ভয়েস অন্যজনের নিকট পাঠানো সহজ হবে। আর ডাউনলিংকের সংযোগ সঠিক হলে সংকেত ইনপুট করতে সহজ হবে।
যেসকল ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক বুস্টার ভালো সার্ভিস দেয়না
দুটি সমস্যার ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক বুস্টার ভালো সার্ভিস দেয়না। তার মধ্যে প্রথমটি হলো ওভারলোড সমস্যা। সেল বুস্টারগুলো মূলত স্থানভেদে সাজানো হয়ে থাকে। শহর এবং গ্রামীন তথা গ্রামের জন্য এটা ডিজাইন করা হয়ে থাকে। নেটওয়ার্কগুলো ধাপ অনুযায়ী যদি কাজ না করে থাকে তবে সেক্ষেত্রে চিন্তার কারণ থাকতে পারেনা।
ইনপুট তথা লোড হওয়ার সময়ে কল এর গতি বা ইন্টারনেট স্পিড ঠিক রাখার ক্ষেত্রে করণীয় হলো- কোন সেল বুস্টিং ঠিক কিভাবে কাজ করে তা জানতে হবে। কিভাবে সমস্যার সমাধান করা হয় তা সম্পর্কে বুঝতে হবে।
ওভারলোড ঠিক করার উপায়
শক্তিশালী ডেটা ইনপুট করার সময়ে এটি পরিবর্ধককে ওভারলোড করে থাকে। বুস্টিং শক্তি খুব দ্রুতই হ্রাস পেয়ে থাকে। এটি সাধারণ বিষয়। এমনকি এটি নিজ থেকে সমাধান হলেও আবার ক্যালিব্রেট অবিচ্ছিন্ন অবস্থার দিকে পৌঁছাবে।
ওভারলোড সেল বুস্টার ঠিক করার উপায়গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি হলো: আউটডোরে অ্যান্টেনা সামঞ্জস্য । দিকনির্দেশনার জন্য অ্যান্টেনা ব্যবহার করে থাকলে বাইরের অ্যান্টেনাটি।খুব দ্রুতই সরাতে হবে। ওভারলোড সতর্কতা পরীক্ষা করে করে এগোতে হবে। আর যখন সঠিক স্থান টি পাওয়া যাবে তখনই এটি সংকেত পাঠানোর ক্ষেত্রে সঠিকভাবে কাজ করবে।
দ্বিতীয়টি হলো- টাওয়ারের নিকটে থাকা অবস্থায় এই সমস্যায় পড়লে তা নিশ্চয় দুর্ভাগ্য হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। তখন এর থেকে সমাধান স্বরূপ সংকেতের শক্তি বাড়াতে অ্যাটেনুয়েটর সঠিক। এটি সমস্যার সমাধান স্বরূপ। এটি অ্যান্টেনা তারের মাধম্যে আগত সংকেত এর ডেসিবেল কমায়।
মোবাইল নেটওয়ার্ক বুস্টার কেনার ক্ষেত্রে যেসব দিকে খেয়াল রাখতে হবে
নেটওয়ার্ক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক বুস্টার একটি উল্লেখযোগ্য সঠিক ব্যবহার। কিন্তু এটি কেনার ক্ষেত্রেও সচেতনতা জরুরি। নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি। কেননা বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন ধরণের বুস্টার চালু করেছে। আর তাই নেটওয়ার্ক বুস্টার কেনার ক্ষেত্রে তাদের সম্পর্কে মোটামুটি হলেও ধারণা নিয়ে নিতে হবে।
তাদের সম্পর্কে জানার মৌলিক তথ্যগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো- তারা কোন উপাদানের দ্বারা এগুলো তৈরি করে থাকে, তাদের ক্ষমতা কেমন হবে, তাদের কভারেজ অঞ্চলের আকার কেমন হবে, ডিজাইন কেমন হবে ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক জ্ঞান থাকা জরুরি।
নয়তো ভূল ধরণের ডিভাইস ক্রয় করে পরে পস্তাতে পারেন। মোবাইল ফোন বুস্টারগুলো রিপিটার ও এক্সটেন্ডার হিসেবেও সুপরিচিত। এরা সব নেটওয়ার্ক ক্যারিয়ারে মোবাইলে সেলুলার সিগনাল এর শক্তি উন্নত করে।
বুস্টার ফোর-জি এলটিই নেটওয়ার্ক সমর্থন করার পর এখন ফাইভ-জি সম্পর্কেও উপলদ্ধ। সেলুলার বুস্টার শেষ হয়ে যাওয়া কল, ডেটা ট্রান্সফার রেট ইত্যাদি চিহ্নিত করে থাকে। দুর্বল অঞ্চলের সংকেতের দিন শেষে এখন সংকেত বাড়ানোর জন্য এই নেটওয়ার্ক বুস্টার ভালোভাবে সাহায্য করে থাকে।
নেটওয়ার্ক বুস্টার এর যেই মডেলটি বাজেট এর মধ্যে বেস্ট হবে
নেটওয়ার্ক বুস্টারের যে মডেলগুলো উত্তম সে সব এর মধ্যে GSM 900MHz 2G 3G 4G Dual port Mobile Cell Phone Signal Booster Repeater Amplifier একটি চমৎকার নেটওয়ার্ক বুস্টার। এটি একটি গ্রাহক ডিভাইস হওয়ার কারণে ওয়্যারলেসের কর্মীদের থেকে ডিভাইসটির নিবন্ধন করতে হবে। অনেক ওয়্যারলেস দাতা সিগনালকে বুস্টার ব্যবহারে সম্মত হন। অ্যান্টেনা সাধারণত মানুষ থেকে দূরের অবস্থানে ইন্সটল করতে হয় সেটি কমপক্ষে ২০ সে.মি. দূরত্বের হলেও।
নেটওয়ার্ক বুস্টারটির বৈশিষ্ট্য :-
- প্রাইস ৪৬০০ টাকা।
- সহজ ইনস্টলেশন এবং অপারেশন।
- ফুল ডুপ্লেক্স, ডুয়াল- পোর্ট ডিজাইন। এএলসি ব্যবহারের উপযোগি।
- আন্তঃমডুলেশন আর বিচ্ছুরণকে স্থিরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
- নির্ভরযোগ্যতা জিবি৬৯৯৩-৮৬ স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে।
স্পেসিফিকেশন :-
- ৮৮০ MHZ – ৯১৫ MHZ
- ৯৩৫- ৯৬০ MHZ।
- পাওয়ার ৭০ থেকে ৪০ DBM।
- সিগনাল কভারেজ : ১৫০ বর্গমিটার।
- প্রতিবন্ধকতা : ৫০০
- নির্জনতা : ৬৫ DB
- পাওয়ার সাপ্লাই : ১১০V
ইনস্টলেশন পদ্ধতি :-
অ্যান্টেনা রিসেপশন ঠিক করে সিগনাল টাওয়ারের দিক ঠিক করতে হবে। এরপর রিপিটার মেশিনের মধ্যে বিটিএস পোর্টে আউটডোর অ্যান্টেনা যুক্ত করতে হবে। তারপর রিপিটার মেশিনে মোবাইল পোর্ট ইনডোর অ্যান্টেনা যুক্ত করতে হবে তারের মাধ্যমে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য :-
- আউটডোর এবং ইনডোরের অ্যান্টেনার দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
- অ্যান্টেনা সেটের জন্য উপযুক্ত সংকেত বাছাই করতে হবে।
- আউটডোরে ভালো সংকেত না থাকলে তা ভিতরে কাজ করবেনা ভালোভাবে।
সিগনাল বুস্টার রিপিটার বাড়ির ভিতরের দুর্বল নেটওয়ার্ক দূর করে। দ্রুত ডেটা উপভোগ, ভালো নেটওয়ার্ক সার্ভিস উপভোগ করা যাবে । নিম্ন অপারেটিং তাপ, নিম্ন নয়েজ রিসিভ, সিগনাল বুস্টার ১৫০ বর্গ মিটার পর্যন্ত খোলা জায়গায় কভার করতে পারে।
মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন গুগল পেন্ডোরাসহ ভারী অ্যাপগুলো উচ্চগতির আপলোড এবং ডাউনলোড ডেটা প্রদান করতে পারে। এতে করে ভিডিও কনফারেন্স এ কথা বলাও সম্ভব।
শেষ কথা
আশা করি মোবাইল নেটওয়ার্ক বুস্টার কি এবং কিভাবে এর মাধ্যমে মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধান হয় তা ভালো মত বুঝতে পেরেছেন। তাছাড়া আমি একটি নেটওয়ার্ক বুস্টার এর মডেলের নামও সাজেস্ট করে দিয়েছি যেনো আপনাদের কেনার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়। আর আপনাদের যদি কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
~ ধন্যবাদ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন